গর্ভাবস্থায় বেশি ঝাল খেলে কি হয়
গর্ভাবস্থার প্রথম সপ্তাহ থেকে একদম ৪০ সপ্তাহ পর্যন্ত একজন নারী অবর্ণনীয় কষ্টের মধ্য দিয়ে জীবন ধারণ করেন। এই সময় চাইলেই যে কোন রোগের ঔষধ সেবন করা যায় না। তাই খাবার-দাবারের ক্ষেত্রে থাকতে হবে বিশেষ সচেতনতা। গর্ভাবস্থার প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত বিভিন্ন মুখরোচক খাবার খেতে ইচ্ছে হতে পারে। এক্ষেত্রে ঝাল মসলাযুক্ত খাবার অনেকেই গর্ভাবস্থায় পছন্দ করে থাকেন।
কিন্তু এটা কি আসলেও সঠিক? তাই অনেকেই প্রশ্ন করেন গর্ভাবস্থায় বেশি ঝাল খেলে কি হয়? এই প্রশ্নের উত্তর নিয়ে সাজানো হয়েছে আমাদের আজকের আর্টিকেল। গর্ভাবস্থায় বেশি ঝাল দেওয়া খাবার খেলে উচ্চ রক্তচাপের আশঙ্কা বেড়ে যেতে পারে। তবে ঝাল খাবার যে একেবারেই খাওয়া যাবেনা এমনটি নয়। ঝাল খেলেও এর মাত্রা সহনীয় হতে হবে। স্ত্রীরোগ ও প্রসূতি বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ইশরাত জেরিন বলেন- গর্ভাবস্থার একদম শেষ তিন মাসে ঝাল মসলাযুক্ত খাবার খুব কম পরিমাণে গ্রহণ করা ভালো। চলুন এক নজরে দেখে নেই গর্ভাবস্থায় বেশি ঝাল খেলে কি হয়?
- গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা তৈরি হতে পারে,
- উচ্চ রক্তচাপ তৈরি হতে পারে,
- মাথা ঘোরার সমস্যা বেড়ে যেতে পারে,
- অন্ত্রের প্রদাহ বাড়তে পারে,
- ডায়রিয়ার মতো সমস্যা তৈরি হতে পারে,
- বমি বমি ভাব বাড়তে পারে।
- গর্ভাবস্থায় কি খেলে বাচ্চা ফর্সা হয়
- গর্ভাবস্থায় কি খেলে বাচ্চা কালো হয়
- গর্ভাবস্থায় টক খেলে কি হয়
- গর্ভাবস্থায় চিড়া খেলে কি হয়
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা তৈরি হতে পারে
যে কোন গর্ভবতী মা স্বাভাবিকভাবেই গ্যাস্ট্রিকের সমস্যাই ভোগেন। অতিরিক্ত পরিমাণে ঝাল খেলে তার গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বেড়ে যেতে পারে।
উচ্চ রক্তচাপ তৈরি হতে পারে
উচ্চ রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে শুকনো মরিচ এবং শুকনো মরিচের গুঁড়ো দুটোই দায়ী। অতিরিক্ত ঝাল খেতে ইচ্ছা হলে গর্ভবতী মা কাঁচা মরিচ খেতে পারেন। কিন্তু শুকনো মরিচ উচ্চ রক্তচাপ বৃদ্ধি করে।
মাথা ঘোরার সমস্যা বেড়ে যেতে পারে
অতিরিক্ত ঝাল খেলে পেটে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা তৈরি হওয়ায় মাথা ঘোরা বেড়ে যেতে পারে। এতে করে গর্ভবতী মা অস্বস্তি বোধ করেন।
অন্ত্রের প্রদাহ বাড়তে পারে
গর্ভবতী মা অতিরিক্ত পরিমাণে ঝাল খেলে পেটে ব্যথার সমস্যা তৈরি হয়। এটি অন্ত্রের প্রদাহ বাড়িয়ে তোলে এবং গর্ভস্থ শিশুর জন্য ক্ষতিকর।
ডায়রিয়া হতে পারে
অতিরিক্ত ঝাল খাওয়ার ফলে পেটে ব্যথা হওয়ার পাশাপাশি ডায়রিয়ার মত সমস্যা পরিলক্ষিত হয়। তাই চিকিৎসকণ এই সময়ে কম ঝাল খাওয়ার পরামর্শ প্রদান করেন।
বমি বমি ভাব বাড়তে পারে
আমরা পূর্বেই আলোচনা করেছি, গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত ঝাল খেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা, মাথা ঘোরা ইত্যাদি তৈরি হয়। এবং এরূপ সমস্যায় বমি বমি ভাব বেড়ে যাওয়া খুবই স্বাভাবিক।
গর্ভাবস্থায় বেশি ঝাল খেলে কি ক্ষতি হয়
গর্ভাবস্থায় বেশি ঝাল খেলে কি ক্ষতি হয় এ সম্পর্কে অনেকেই অবগত নন। গর্ভবতী মায়ের ইমিউনিটি সিস্টেম এর লেভেল অনেকটা কমে যায়। এই সময় গর্ভবতী মায়েরা বায়ুবাহিত এবং পানিবাহিত রোগে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আক্রান্ত হয়। তাই খাবার-দাবারের ক্ষেত্রেও বেশ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত পরিমাণে ঝাল খেলে সামান্য থেকে অতিমাত্রায় ডায়রিয়া এর লক্ষণ দেখা দিতে পারে। এটি গর্ভাবস্থায় মা এবং শিশু দুজনের শরীরের জন্যই মারাত্মক ক্ষতিকর। কারণ মায়ের শরীর থেকে অতিরিক্ত পরিমাণে ফ্লুইড বের হয়ে যায়।
তাছাড়া কাঁচামরিচ গর্ভবতী মায়ের শরীরের জন্য খুবই ভালো। নিয়মিত কাঁচা মরিচ খেলে গর্ভবতী মা এবং গর্ভস্থ শিশুর স্বাস্থ্য খুবই ভালো থাকে। তবে এই সময় শুকনো মরিচ অথবা শুকনো মরিচের গুড়ো পুরোপুরি এড়িয়ে চলতে হবে।
শেষ কথা
আজকের এই আর্টিকেলে আমরা গর্ভাবস্থায় বেশি ঝাল খেলে কি হয় এই সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। যেসব গর্ভবতী মায়েরা এ বিষয়ে জানতে চাচ্ছিলেন আজকের আর্টিকেলটি তাদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ হবে বলে আশা করি।
বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী
১) গর্ভাবস্থায় কুসুম গরম পানি খেলে কি হয়?
উত্তর: গর্ভাবস্থায় কুসুম গরম পানি খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর হয় এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।
২)24 সপ্তাহে বাচ্চার জন্য কি কি খেতে হবে?
উত্তর: এই সময়ে বাচ্চার জন্য প্রোটিন এবং ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার গুলো অধিক মাত্রায় প্রয়োজন।
৩) গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসে কি খাবেন?
উত্তর: গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসে ব্রকলি, পাতাকপি, সামুদ্রিক মাছ, দেশি ছোট মাছ, ডিম পালং শাক ইত্যাদি প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে।