Chorabali Logo
স্বাস্থ্য

10 টি কাঁচা রসুন খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

রসুন আমাদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি খাবার। রান্না ও চিকিৎসা ক্ষেত্রে ব্যাপক ভাবে ব্যবহার করা হয়। আমাদের শরীরের জন্য কাঁচা রসুন খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা অনেক। তবে কাঁচা রসুনের উপকারিতাই বেশি। কাঁচা রসুন অনেক ভাবেই খাওয়া যায়। কাঁচা রসুন চিবিয়ে খাওয়ার উপকারিতাও অনেক। আজকের এই পোস্টে কাঁচা রসুনের উপকারিতা, অপকারিতা, কিভাবে রসুন খেতে হবে, রসুনের পুষ্টি উপাদান কি কি, কি কি রোগ নিরাময় করতে সক্ষম ইত্যাদি বিষয়ে জানবো।

কাঁচা রসুন খাওয়ার উপকারিতা 

রসুনের গুনাগুণ বলে শেষ করা সম্ভব না। আমাদের শরীরের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে। হার্ট এর সমস্যা, হজম সমস্যা, গ্যাসের সমস্যা, কিডনির সমস্যাসহ প্রায় সব ধরণের রোগের প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে। সামান্য কিছু নিয়মের মধ্যে কাঁচা রসুন খেলে আমাদের শরীরের অনেক রোগ নিরাময় করা সম্ভব।  

কাঁচা রসুনের পুষ্টি উপাদান কি কি? 

কাঁচা রসুনে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি এবং বায়োঅ্যাকটিভ নামক যৌগ। যা আমাদের শরীরের স্বাস্থ্যের অনেক উপকার সাধন করে। এছাড়াও রসুনে রয়েছে- 

  1. থিয়ামিন (ভিটামিন বি১),
  2. রিবোফ্লাবিন (ভিটামিন বি২), 
  3. নায়াসিন (ভিটামিন বি৩), 
  4. প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড (ভিটামিন বি৫), 
  5. ভিটামিন বি৬, 
  6. ফোলেট (ভিটামিন বি৯) ও 
  7. সেলেনিয়াম।

কাঁচা রসুন খাওয়ার কাঁচা রসুন খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

এ ছাড়া রসুনে রয়েছে এলিসিন নামক এক ধরণের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এই উপাদানটি মানব দেহের ক্যানসারসহ বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দূর করতে সক্ষম। রসুনের এই গুরুত্বপূর্ণ উপাদানের জন্য রসুনকে পারফুডে বানিয়েছে। 

আরও>> গর্ভাবস্থায় চিড়া খেলে কি হয়

কাঁচা রসুন খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

কাঁচা রসুন খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা - 3

উপকারিতা

১. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাঃ নিয়মিত কাঁচা রসুন খেলে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। রসুনের দুইটি গুণ রয়েছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিফাঙ্গাল। এই  গুণের কারণে মানব দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। সকালে খালি পেটে কাঁচা রসুন খেলে এই উপকার বেশি। কাঁচা রসুন খাওয়ার উপকারিতার মধ্যে অন্যতম। 

২. রক্ত সঞ্চালন: সকালে খালি পেটে দুই কোয়া কাঁচা রসুন খেলে আমাদের শরীরের রক্ত সঞ্চালন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এর ফলে হার্টের রোগের ঝুকি কমে যায়। রক্ত প্রবাহ বাধা হলে অনেক ধরণের রোগ আমাদের শরীরে বাধা তৈরি করতে পারে। কাঁচা রসুন খেলে এই ঝুঁকি থাকে না। আমাদের শরীরের রক্তে কাঁচা রসুন খাওয়ার উপকারিতা রয়েছে অনেক। 

৩. পুরুষের যৌনক্ষমতাঃ বিভিন্ন কারণে পুরুষের যৌ*ন ক্ষমতা কমে যেতে পারে। প্রতিদিন সকালে ২ থেকে ৩ কোয়া কাঁচা রসুন খেলে যৌনক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। তবে ৩০ থেকে ৪৫ দিন একটানা খেতে হবে। ডাক্তারদের মতে,  একজন পুরুষের যৌন ক্ষমতার মূল উৎস হচ্ছে সঠিক ভাবে রক্ত চলাচল। প্রতিদিন সকালে খালি রসুন খেলে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায় এবং যৌ*ন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।  

৪. হৃৎপিণ্ডের শক্তিবর্ধক: প্রতিদিন সকালে খালি পেটে দুই কোয়া রসুন পানি দিয়ে গিলে খেলে হৃৎপিণ্ড শক্তিশালী হবে, রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধির কারণে হৃৎপিণ্ডের ব্লকগুলো আর বাড়বে না এবং ব্যাঘাত সৃষ্টি করতে পারবে না, বুকের ব্যথা কমে যাবে, সিঁড়ি বেয়ে উঠতে কষ্ট হবে না।

৫. উচ্চ রক্তচাপ: আমাদের রক্ত উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।  উচ্চ রক্তচাপ কমাতে রসুন খুব ভাল কাজ করে। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে কাঁচা রসুন খেলে বেশি উপকার হয়। রক্ত চাপ বাড়ার প্রধান কারণ হল রক্তে কোলেস্ট্রল বেড়ে যাওয়া। রসুন কোলেস্ট্রল এর মাত্রা কমিয়ে রক্তের চাপ স্বাভাবিক রাখে।  

৬. ফুসফুস সংক্রমণ প্রতিরোধ: আমাদের ফুসফুস বিভিন্ন কারণে সংক্রমণ হয়ে থাকে। অ্যালার্জি সমস্যা, ঠান্ডা, ধুলাবালি ইত্যাদি কারণে সমস্যা দেখা দিতে পারে। এই সমস্যা দূর করার জন্য রসুনের রস খুব ভাল কাজ করে। রসুনের রস ফুসফুসের রোগ প্রতিরোধ ও প্রতিকার করতে সাহায্য করে। ফুসফুসের জন্য কাঁচা রসুন খাওয়ার উপকারিতা অনেক এবং খুব গুরুত্বপূর্ণ। 

৭. কোষের ক্ষতিরোধ: অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট আমাদের শরীরের সেল ড্যামেজ’ ও ‘এজিং রোধ করে। ব্রেনের কোষের ড্যামেজ কমায়। আলঝেইমারস ও ডিমেনশিয়ার এর মত বড় বড় রোগ থেকে আমাদের ব্রেনকে রক্ষা করে। 

৮. হাড় শক্তি: ২৫ বছর বয়সের পর থেকে মানুষের হাড়ের বৃদ্ধি থেমে যায়। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় হাড় ক্ষয় শুরু হয়। মহিলাদের এই ধরনের সমস্যা বেশি হয়। মহিলাদের মাজার হাড় ক্ষয় রোধ করে কাঁচা রসুনের রস। ডাক্তাররা রোগীদের নিয়মিত রসুনের রস খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকে। 

৯. ত্বক ও ব্রণ : প্রতিদিন ২ কোয়া কাঁচা রসুন খালি পেটে খেলে মাদবদেহের ত্বক ও ব্রেন ভালো থাকে। চেহারায় বয়সের ছাপ পরে না, মুখের কাল দাগ দূর হয়ে যায়, ব্রণের সমস্যা দূর হয়। এছাড়াও ত্বক জনিত প্রায় সকল সমস্যা দূর করতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। 

১০। যৌ*ন সমস্যাঃ যাদের এই ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তারা নিয়মিত সকালে খালি পেটে ও রাতে ঘুমানোর আগে কাঁচা রসুন খেতে পারেন। কাঁচা রসুন এই ধরনের সমস্যা দূর করতে বিশেষ ভুমিকা পালন করে। 

আরও>> গর্ভাবস্থায় বেশি ঝাল খেলে কি হয়

কাঁচা রসুন খাওয়ার অপকারিতা

আমাদের শরীরের অনেক বড় বড় সমস্যার জন্যই রসুন খুব উপকারি। তবে রসুন সবার জন্য উপকারি না। যেমন- যাদের রক্তের প্রেসার কম তাদের জন্য বিপদজনক। রসুন উচ্চ রক্তচাপ কমিয়ে রাখতে সাহায্য করে। তাই যাদের রক্তচাপ কম তারা রসুন খেলে তাদের রক্তচাপ বা ব্লাড প্রেসার আরও কমে যায়। কাঁচা রসুন খাওয়ার উপকারিতাই শুধু আছে এমন না, কাঁচা রসুন খাওয়ার অপকারিতাও আছে। আসুন জেনে নেওয়া যাক রসুন আমাদের শরীরের কি কি সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।  

১. বিভিন্ন গবেষণায় জানা যায় যে, অতিরিক্ত রসুন খেলে আমাদের শরীরে বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদান অ্যালিসিন লিভারে বিষক্রিয়া তৈরি করতে পারে।

২. সালফার রসুনের একটি উপাদান যা আমাদের পেটে গ্যাস এর সমস্যা সৃষ্টি করে। খালি পেটে বেশি রসুন খেলে এমন সমস্যা দেখা দেয়। ২ কোয়া এর বেশি রসুন খাওয়া যাবে না। 

৩. রসুন আমাদের রক্তের ঘনত্ব কমায়। তাই অতিরিক্ত কাঁচা রসুন খাওয়া উচিত না।  

৪. রক্তচাপ কমে যায়, গর্ভবতী নারীদের রসুন খাওয়া যাবে না, শিশুদের রসুন খাওয়া যাবে না, কারণ রসুনের যে উপাদান থাকে তা খুবই সক্রিয়।

৫. মুখের দুর্গন্ধ সৃষ্টি করে। রসুনে থাকা উপাদান সালফারের কারণে মুখে দুর্গন্ধ হয়। 

কখন, কীভাবে রসুন খাবেন? 

কাঁচা রসুন খাওয়ার উপকারিতা পেতে হলে আমাদের নিয়মিত রসুন খেতে হবে। তবে বেশি কাঁচা রসুন খাওয়ার অপকারিতাও রয়েছে আমাদের শরীরের জন্য। খালি বা ভরা পেটে যে কোন ভাবেই রসুন খেতে পারে। তবে ডাক্তাররা সকালে খালি পেটে কাঁচা রসুন খাওয়ার জন্য উপদেশ দেয়। এছাড়া দিনের যে কোন সময় রসুন খেতে পারেন সকাল, দুপুর বা রাতে। তবে মনে রাখবেন দিনে ২ কোয়া এর বেশি রসুন খাওয়া যাবে না। কাঁচা ছাড়াও যে কোন ভাবে আপনি রসুন খেতে পারেন। 

১। রান্না করেঃ আপনার বাসার যে কোন ধরনের রান্নার সাথে রসুন ব্যবহার করতে পারেন। এইভাবে রসুন খাওয়া খুব ভাল।

২। কাঁচা রসুনঃ সকালে ও রাতে কাঁচা রসুন নিয়মিত খেতে পারেন। অথবা দিনের যে কোন সময়। 

৩। ডায়েট প্লানঃ আপনার ডায়েট প্লানে রসুন রাখতে পারেন। নিয়মিত রসুন শরীরের জন্য উপকারি। 

৪। আছারঃ রসুন দিয়ে খুব মজার আঁচার তৈরি করা যায়। পারলে এই ভাবেও রসুন খেতে পারেন। 

রসুন আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী একটি খাবার।  আমাদের সকলের খাবার তালিকা রসুন অবশ্যই রাখা উচিত। প্রতিদিন যে কোন সময় দুই কোয়া রসুন খাওয়ার অভ্যাস সবাইকে করতে হবে।  তাহলে আমাদের শরীর, মন এবং ব্রেণ সবকিছুই ভালো থাকবে। কাঁচা রসুন খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানানোর চেষ্টা করেছি। ভালো লাগলে অবশ্যই আমাদের ওয়েব সাইট নিয়মিত ভিসিট করবেন। 

বহুল জিজ্ঞেসিত প্রশ্ন

বেশি রসুন খেলে কি ক্ষতি হয়?

উত্তরঃ প্রয়োজনের থেকে বেশি খেলে ক্ষতি হতে পারে। দিনে ২ কোয়ার বেশি না।

রসুন কি রক্ত ​​পাতলা করে?

উত্তরঃ অতিরিক্ত খেলে রক্ত পাতলা হয়ে যায়। যারা হার্ট এর রোগে ভুগছেন তাদের জন্য পাতলা রক্ত দরকার।

রসুন চূর্ণ করার পর অ্যালিসিন কতক্ষণ থাকে?

উত্তরঃ প্রায় ২ থেকে ৩ দিন ।

Mahedi

পেশায় একজন চাকরিজীবী আমি। লেখালিখির শখ অনেক আগে থেকেই। এই শখকে পুজি করে মানুষের মাঝে জ্ঞান বিতরণের সামান্য চেষ্টা আমার। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লেখালিখি করতে বেশি পছন্দ করি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Check Also
Close